May 21, 2024, 6:00 pm

মোবাইলে আসক্ত হয়ে শিশু-কিশোর নিজেদের ভবিষ্যতকে হুমকির মধ্যে ফেলছে !

Reporter Name
  • আপডেট Monday, August 21, 2023
  • 73 জন দেখেছে

মো: মুর্শিকুল আলম, গাজীপুর :: মোবাইলই যেন এখন তাদের খেলার মাঠ! বর্তমানে ‘শিশু-কিশোররা একসাথে বসে মোবাইলে এমনভাবে গেইম খেলছে কেউ কারো সাথে তাকিয়ে কথা পর্যন্ত বলছে না। এরফলে সমাজিক আচরণ ও বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করতে পারছে তারা। পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশও ঘটছে না। এ থেকে বাঁচতে এখনই মোবাইলের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া শিশু-কিশোররা যেন মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বাবা-মার খেয়াল রাখতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন ঘরে ঘরে স্মার্ট মোবাইল ফোন। পরিবারের বড় সদস্যদের পাশাপাশি বর্তমানে শিশু-কিশোরদের হাতেও স্মার্ট মোবাইল ফোন দেখা যায়। এই মোবাইল ফোনের আসক্তি কেড়ে নিচ্ছে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সময়টুকু। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ মানসিক বিকাশজনিত কর্মকাণ্ডে একটি গ্রাম বা পাড়া-মহল্লার শিশু-কিশোরদের বড় একটা অংশ অনুপস্থিত। গেমে আসক্ত হয়ে একদিকে শিশু-কিশোররা নিজেদের ভবিষ্যতকে হুমকির মধ্যে ফেলছে। মোবাইল ছাড়া যেমন শিশু-কিশোরদের নাওয়া-খাওয়ায় অনীহাসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিশু-কিশোররা রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে শারীরিকভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যু হচ্ছে।
মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে অভিভাবকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। শিশু-কিশোরদের জ্ঞান আহরণ ও মেধা বিকাশের জন্য বিদ্যমান এই পরিবেশ অব্যাহত থাকলে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বর্তমান প্রজন্মকে রক্ষা করে আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
গাজীপুরের টঙ্গীর হাজী কছিমউদ্দিন পাবলিক স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবক শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা মোবাইল ফোনে বেশি আসক্তি হয়ে পড়ছি। এতে আমরা অনেক সমস্যা ফেস করছি। শিশুরা খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারছে না। মোবাইল দেখে দেখে খাবার খাচ্ছে, পেটে খাবার যাচ্ছে নাকি অন্য কোথাও, সে বিষয়েও তাদের খেয়ালই থাকে না। অনেক সময় তারা বাইরে খেলতে যাওয়ার কথা বলে তবে ধীরে ধীরে মোবাইলে তাদের আসক্তি বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন দরকার। তিনি মোবাইল থেকে বাচ্চাদের কীভাবে দূরে রাখা যায় সে বিষয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
টঙ্গী রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের দৈনিক বিজয়বাংলা টিভিডটকম এর প্রকাশক ও সম্পাদক পীরজাদা মো: নোয়াব আলী জানান, মোবাইল ফোনের যুগে বাচ্চারা এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে তাদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, তাদের চোখ নষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাকে শান্ত রাখতে মা-বাবারাও শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে রাখছেন। এ মোবাইল ফোন আসক্তি রোধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অভিভাবকরা সচেতন না হলে বাচ্চারা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। অভিভাবক নার্গিস আক্তার বলেন, সে স্পাইডারম্যান, আয়রনম্যান, ব্যাটম্যান এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তার শারীরিক ও মানসিক রোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমাদের শিশুদের এসব ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সচেতন হওয়া দরকার। কীভাবে এসব টেকনোলজি জগৎ থেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে তাদেরকে সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়, সেভাবে আমরা সচেষ্ট হব। প্রাকৃতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিটি শিশুকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
নাট্যকর্মী শাহজাহান শোভন বলেন, ডিজিটালের যুগ থেকে আমরা ক্রমশ স্মার্ট যুগে পদার্পণ করছি। মোবাইল ফোনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেজন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকেও মোবাইল ফোন সঠিকভাবে ব্যবহারের বিষয়টি বুঝাতে হবে। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে মাঠ না থাকার কারণে খেলাধুলা থেকে পিছিয়ে আছে আমাদের ছেলেরা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ নয়, পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত মাঠের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। আমাদের শিশু-কিশোরদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেও সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গাজীপুর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: হেদায়েত উল্লা বলেন, আমরা আগে দেখেছি বাচ্চাদের শান্ত রাখতে মা-বাবারা খেলাধুলার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে রাখতেন। আর এখন ৬/৭ মাসের বাচ্চাদের মোবাইল চালানো দেখলে আমাদের অবাক হতে হয়। আগে শহর-গ্রামের সবখানেই খোলা জায়গা বা মাঠ ছিল বেশি। এখন খোলা বা পতিত জায়গার সংখ্যা যেমন কমেছে তেমনি কমেছে খেলার মাঠ। ফলে শিশুরা এখন অনেকটা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী। কম্পিউটার মনিটার বা মোবাইলই এখন তাদের খেলার মাঠ। বিশেষ করে কিশোররা গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল বা কম্পিউটারে গেম খেলে। শিশু-কিশোরদের এই প্রবণতা দূর করতে না পারলে এই প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন সরকার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: ওয়াদুদুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত হয়েছি। এতে মোবাইলের বিকল্প নেই। মোবাইল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য একটি বস্তু হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে যারা স্কুলে পড়ছে, তারাও মোবাইল ব্যবহার করছে। আমরা লক্ষ্য করছি যে, তারা কিছু নিষিদ্ধ সাইটেও প্রবেশ করছে, গেমস খেলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা অধিকাংশ সময় ব্যয় করছে।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছর পরে আমরা একটা মূর্খ প্রজন্ম পাব। সুতরাং, এখনই মোবাইল ফোনের অপব্যবহার যেন না হয় আমাদেরকে সেজন্য সমন্বিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। আমরা দেখি অনেক পরিবারে বাবা-মা-সন্তান একসাথে মোবাইল চালাচ্ছে। এটা কিন্তু উদ্বেগের বিষয়। পরিবারের মা-বাবা হচ্ছেন সন্তানের প্রথম শিক্ষক। তারা মোবাইল ব্যবহারে সতর্ক হলেই সন্তানরাও শিখতে পারবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর