স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে একটি প্রতারক চক্র। এ সময় প্রতারচ চক্রের জিম্মায় থাকা নারী ও পুরুষসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রতারক চক্রের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১এর সদস্যারা।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- মো: আস্তাকুল আমিন আনাম (৩০), মো: তৌফিক (২৪), মো: ইমরান হোসেন (১৯), মো: জুনায়েদ (২১), মো: রনি আহমেদ (২১), সালাউদ্দিন সরকার (২০), মো: জিসান হোসেন (২১), মো: রায়হান (১৮), মো: আতিক হাসান (১৯), আজিজুল হাকিম (২৩), সম্পা আক্তার (২৪), মোছা: বিউটি খাতুন (২১), বর্ষা খাতুন (১৯) ও তাহসিন আক্তার মীম (২০)।
গতকাল বুধবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজার সরিবপুর এলাকায় বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিসে এ অভিযান চালায় র্যাব-১। অভিযান শেষে রাত ১০টার দিকে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন ও তাঁর পূর্ব পরিচিত ফারজানা আক্তার পাখি উভয়েই চাকরির প্রত্যাশায় উক্ত কোম্পানিতে আসেন। পরে কোম্পানির লোকেরা তাদের আটক করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। সেই নির্যাতনের ভিডিও সাকিবের বাবার মোবাইলে পাঠায়। পরিবারের কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরে এ বিষয়ে সাকিবের বাবা গত ২০ মার্চ ছেলেকে উদ্ধারের জন্য গাজীপুর র্যাব-১ স্পেশালাইজড কোম্পানিতে আইনি সহায়তার আবেদন করেন। এরপরেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ভুক্তভোগী সাকিবসহ ২৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয় এবং জড়িত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন যাবত এই চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বেস্ট অ্যাকশন সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান এবং তাঁদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। চক্রটি প্রায় ৩ মাস ধরে এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা চাকরি প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়াও চক্রটির স্থায়ীভাবে কোনো অফিস ছিল না বিধায় গ্রেফতারকৃত আসামিরা গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন রশিদ মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসাকে অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।
তিনি আরো বলেন, আমরা ২৭ জন ভুক্তভোগীকে পেয়েছি যাদের সঙ্গে একইভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাকিবকে নির্যাতন করা হয়েছে। এমন কী তার শ্লীলতাহানি করে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছিল। আমরা এখানে ৪-৫ শতাধিক মানুষের আবেদন ফরম পূরণ করা অবস্থায় পেয়েছি। প্রতিটি ফরম পূরণ বাবদ তাদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে নিয়েছে। এরপর নিরাপত্তা কর্মী ও মার্কেটিং অফিসার হিসেবে চাকরি পেতে ১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এই সকল মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণায় জড়িত। তারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদন নেই। তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক সংগ্রহ করত। এই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আমরা একটি টর্চার সেল পেয়েছি। যেখানে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরত চাইলে তাদের ওই রুমে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই টর্চার সেলে দেশীয় অস্ত্র, ইলেকট্রনিক সর্ট দেওয়ার ক্যাবল, লাঠিসোঁটা পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।