মুর্শিকুল আলম :: গত ১৪ মে মা দিবস পালিত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে পরম ভালোবাসা মমতা নিয়ে। মা’য়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশ করতে বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি দিনই মায়ের জন্য। কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন, ‘মাতৃত্বেই সকল মায়া, মমতা ও ভালোবাসার শুরু এবং শেষ।’ পৃথিবীর সূচনা থেকে মা শব্দটির মমতা এবং ক্ষমতা অসীম, যা কোনো কিছুর মানদণ্ডে বিবেচনা করা যায় না। মা ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। সন্তান গর্ভে ধারণ করেই মা জীবনে প্রথম মৃত্যুর ঝুঁকির মুখোমুখি হন। সময় যত বাড়তে থাকে, ঝুঁকিও তত বাড়ে। একজন মা অনেক কষ্টে তার গর্ভে সন্তান ধারণ করে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখান, যা সত্যি অবিশ্বাস্য।
পৃথিবীতে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের দয়া সহানুভূতির চেয়েও যার ভালোবাসা বেশি তিনিই হলেন মা। শত ত্যাগ ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা বড় করে তোলেন সন্তানকে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খেতে দেন। মায়ের স্মৃতি বহন করেই সন্তানের বেঁচে থাকা, মায়ের একটা শরীরই হলো তার সন্তান। নিজে শত কষ্ট সহ্য করলেও সন্তানের সামান্য কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না। সন্তানের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক মা। একজন মা সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, নিজেকে তীলে তীলে বিসর্জন দেন যা একজন দক্ষ শিক্ষক দ্বারাও সম্ভব না।
সন্তানের বয়স যতই বাড়ুক, মায়েদের কাছে তাদের সন্তান সব সময়ই ছোট থাকে। সন্তান মায়ের অনুকরণে কথা বলতে শেখে; তাই মায়ের কাছে প্রথম শেখা ভাষাকে মাতৃভাষা বলে। একজন মা সুভাষিনী হলেই সন্তানরাও মিষ্টভাষী হয়। নৈতিক চরিত্র ও মূল্যবোধের শিক্ষা সন্তানকে মা দিয়ে থাকেন। একজন আদর্শ মা সন্তানের পাশে থাকেন বিপদে বন্ধু হিসেবে। হতাশায় আশার আলোকবর্তিকা হয়ে। অসহায় অবস্থায় অভিভাবক হয়ে। সর্বোপরি সকল পরিস্থিতিতে স্নেহ-দয়া ও ভালোবাসার অপার ভাণ্ডার হলেন মা।
একজন মায়ের যদি ৫টি সন্তান থাকে তাহলে তিন বছর করে লালন-পালন করেন ১৫ বছর। তা করার পরও মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন না। অসহ্যকর কষ্টকর একটা সংসার তৈরি করেন। সারাটি জীবন শত কষ্ট সহ্য করে, জীবনের সঙ্গে লড়াই করে শুধু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকেন মা।
এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও আমরা মা’কে যথাযথ সম্মান করি না। বিশ্বজুড়ে আজ মা’য়েরা অবহেলিত, সন্তানরা খারাপ আচরণ করে। বয়স হলেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আমি। দেশে বৃদ্ধাশ্রম দিন দিন বাড়ছে, ইউরোপ আমেরিকায় এটা খুবই সহজ। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়ের খোঁজখবরও নেয় না উদাসীন সন্তানরা।
অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) মায়ের অধিকার নিয়ে তিনবার বলেছেন, সন্তানের ওপর, পিতার অধিকার সেখানে একবার। মা সন্তানের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই জান্নাত। মা যেমন সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহপরায়ণ, সন্তানদেরও উচিত মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও মমত্ববোধ বজায় রাখা। আমাদের মায়ের সঙ্গে শিশুসুলভ আচরণ করা, সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা, তাদের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের ধনসম্পদ ব্যয় করা, মায়ের সাথে বিনম্রভাবে চলাফেরা করা, যে কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা। মায়ের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করা মায়ের ঠিকানা যেন কখনো বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। তাহলে কিন্তু সন্তানের এই জন্ম পাপ ও ব্যর্থতায় ভরে যাবে। মা দিবসে সন্তানের এই হোক অঙ্গীকার, “আগামী দিনে মা’কে দেব, ভালোবাসাময় একটি পৃথিবী উপহার।”