মো: মুর্শিকুল আলম, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর:: ঢাকার রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুর জেলা। এই জেলায় ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য দর্শনীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গাজীপুরে ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ভ্রমনে আসার রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। ডে-ট্যুরের জন্য গাজীপুরই রাজধানীর সবচেয়ে কাছে। জেলার দর্শনীয় স্থান এবং রিসোর্টগুলোতে পর্যটক এবং পিকনিক পার্টির সবচেয়ে বেশি আগমন ঘটে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে।
শিল্পনগরীখ্যাত গাজীপুরে রয়েছে কয়েক হাজার শিল্পকল-কারখানা। এছাড়াও রয়েছে টাকা ছাপানোর টাকশাল, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, সমরাস্ত্র কারখানা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, আনসার একাডেমি, বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্ক। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলার বিভিন্নস্থানে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েকশ পিকনিক স্পট-রিসোর্ট। জেলা দিয়ে বহমান ব্রহ্মপুত্র, চিলাই, বালু ও পারুলী নদী দিয়ে নৌ-ভ্রমণও করতে পারবে দর্শনার্থীরা। ভাওয়াল ও মধুপুর গড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে শাল বন। বর্তমানে গাজীপুরে রয়েছে শতাধিক পিকনিক স্পট, শুটিং স্পট, রিসোর্ট ও পার্ক। শীতকালে প্রচুর পিকনিকের আয়োজন হয়ে থাকে গাজীপুরের বিভিন্ন পিকনিক স্পট ও রিসোর্টগুলোতে। ভাওয়াল রাজার অসাধারণ বাড়ি, জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলির স্মৃতিবিজড়িত গাজীপুরে।
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর পূর্বপাশে পূবাইলের অবস্থান। বেসরকারি বিনিয়োগে গাজীপুরে প্রথম রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে ওঠে পূবাইলের ভাদুন গ্রামে। বর্তমানে পূবাইলেই আছে ছোট-বড় অর্ধশত রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম অরণ্যবাস রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট, পূবাইল রিসোর্ট ক্লাব, পিএসসিসি রিসোর্ট, গ্রিন ভিউ রিসোর্ট, জল-জঙ্গলের কাব্য, হাসনাহেনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট, কৃষ্ণচূড়া। এসব রিসোর্টে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক কটেজ, সুইমিং পুল, রেস্টুরেন্ট, জিমনেশিয়াম, শিশুদের খেলাধুলার নানা রাইড।
এ ব্যাপারে পূবাইল রিসোর্ট ক্লাবের ম্যানেজার ফয়েজ বিন হাকিম বলেন, সরকার যদি আমাদের এই খাতের ওপর বিশেষ নজর দেয় তাহলে পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো। সেই সাথে পর্যটন খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এ ছাড়া গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, সারাহ রিসোর্ট, গ্রিন ভিউ গলফ রিসোর্টসহ অসংখ্য বিলাসবহুল রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
গাজীপুরে ঘুরতে আসা এক আব্দুল্লাহ জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের দু’পার্শ্বে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি আভিজাত্যপূর্ণ কিছু হোটেল নির্মাণ করা, রাস্তার মাঝখানে সবুজ বৃক্ষের বাগান, রাস্তা পারাপারের জন্য সবুজ ওভার পাস নির্মাণ করা হলে গাজীপুরের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন আব্দুল হামিদ। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকায় ঘোরার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। তাই নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে আসলাম।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটন খাতের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সড়কগুলো খুব শীঘ্রই মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হবে। আমরা সবসময় পর্যটন খাতে বিশেষ নজর দিয়েছি।