May 4, 2024, 6:13 am

রানা প্লাজা ধসের স্মৃতি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী

Reporter Name
  • আপডেট Tuesday, April 23, 2024
  • 21 জন দেখেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: জরাজীর্ণ চিরকুট। তবে লেখাগুলো এখনো স্পষ্ট। বাংলায় লেখা, ‘ভালোবেসে তোমাকে পেতে চাই আরও কাছে’। নিচে আরেকটি লাইনে ইংরেজিতে লেখা ‘আই লাভ ইউ, মাই লাভ জাস্ট ফর ইউ’। ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিক আল আমিনের মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁর পকেট থেকে এই চিরকুট পাওয়া যায়। ১৯ বছরের ওই তরুণের বাড়ি ছিল জয়পুরহাট জেলায়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে তিনি নিহত হন। বহুতল ভবনটি ধসে ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারের বেশি আহত হন।
বাংলাদেশের শিল্পকারখানার ইতিহাসে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার ১১ বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল বুধবার। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এতে নিহত কয়েকজন শ্রমিকের লেখা চিঠি, তাঁদের ছবি, ব্যবহৃত ম্যানিব্যাগ ও মুঠোফোন প্রদর্শন করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আলোকচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়। সকালে গিয়ে দেখা যায়, ধসে পড়া রানা প্লাজা ভবনের জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জায়গাটি বিভিন্ন লতাগুল্মে ভরে গেছে। সামনের দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন কিছু অংশের ময়লা-আবর্জনা শ্রমিকেরা পরিষ্কার করেছেন। সেখানে চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীতে চারজন আলোকচিত্রীর ছবি স্থান পেয়েছে। তাঁরা হলেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, আলোকচিত্রী এন্ড্রু বিরাজ, রাহুল তালুকদার ও শুভ্র কান্তি দাস। এ ছাড়া শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে সাতজনের চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে রয়েছে। স্টুডিওতে তোলা নিহত ২০ শ্রমিকের ছবিও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
নিহত শাহেদুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের ছবিটি স্টুডিওতে তোলা। ওই ছবির ব্যাকড্রপে উড়োজাহাজ। হয়তো শাহেদুলের স্বপ্ন ছিল দেশের বাইরে যাওয়ার। আরেক শ্রমিক আঁখি আক্তার হয়তো সমুদ্র ভালোবাসতেন। আখি ও তাঁর বন্ধুদের ছবির পেছনে যোগ করা হয়েছে সমুদ্র। আঁখি (১৮) রানা প্লাজার সপ্তম তলার নিউওয়েব স্টাইল লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন। তবে সেখান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই প্রদর্শনী সম্পর্কে তাসলিমা আখতার বলেন, ‘প্রদর্শনীটি রানা প্লাজার সামনে আয়োজন করে আবারও সেই অতীতের স্মৃতিকে সামনে আনা হয়েছে। এ ঘটনাকে ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের লড়াইয়ে প্রেরণা দিতেই এ প্রদর্শনী। রানা প্লাজার শ্রমিকদের মতো আর কারও যাতে অকালে মরতে না হয়, এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছে।’
মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, নিহত শাহীদার মা তাহেরা আক্তার, আহত শ্রমিক জেসমিন আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাভার উপজেলা শাখার সভাপতি রুহুল আমিন প্রমুখ।
রুহুল আমিন বলেন, ‘আজ অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয়, যাঁরাই ক্ষমতায় এসে মসনদে বসেন, তাঁরাই নিজেদের প্রভু মনে করেন। আর এ দেশের শ্রমিক মেহনতি মানুষকে তাচ্ছিল্য করে দেখেন। এরই নমুনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। এটা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না; এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। দোষী ব্যক্তিদের বিচার এখনো হয়নি। আমাদের নিজেদেরই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার আদায় করতে হবে।’ রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘রানা প্লাজায় চার বছর কাজ করেছি। আজ কথা বলার মতো ভাষা আমার নেই। ওই দিনটার কথা মনে করতে ভয় লাগে। দুই দিন ভবনের নিচে আটকা ছিলাম। ভাবতে পারিনি বেঁচে বের হতে পারব। আমার মেরুদণ্ডের ওপর ভবনের পিলার পড়েছিল। ১১ বছরেও ক্ষতিপূরণ পাইনি। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হয়নি। আমার মতো আরও অনেকে পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছে।’
তাসলিমা আখতার বলেন, ‘রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে জামিন দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য জামিন স্থগিত করা হয়। এখন আমরা শুনতে পাচ্ছি, তিনি জেল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। যাঁরা নিয়ম না মেনে ভবনের অনুমোদন দিয়েছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা জামিনে মুক্ত হয়েছেন। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। দেশের মানুষের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’
তাসলিমা আখতার আরও বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর আমরা ক্ষতিপূরণ আইন বদলের কথা বলেছিলাম। কিন্তু আইন বদল না করে ক্ষতিপূরণ বাড়িয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের কল্যাণ তহবিল থেকেও কিছু টাকা দিয়ে শ্রমিকদের মুখ বন্ধ করা হয়। আমাদের দাবি, একজন শ্রমিক বেঁচে থাকলে তিনি যে পরিমাণ আয় করতেন, সে পরিমাণ এবং এর সঙ্গে তাঁর যে ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো হিসাব করে এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভিক্ষা নয়, মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর