মো: মুর্শিকুল আলম, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। সারাদেশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় এই ভোট নিয়ে চলছে চুলছেরা বিশ্লেষণ। এবারের ভোটে সাধারণ মানুষের কী ভূমিকা ছিল, ভোট নিয়ে এখনও কী ভাবছেন তারা এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে সাধারণ মানুষের সাথে কথা হয়। তাদের ধারণা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দল নির্বাচনে আসেনি। তাদের অনেক ভোট ব্যাংক রয়েছে। এইসব দল অংশগ্রহণ না করায় ভোটার উপস্থিতি অনেক কমছিল। এর ফলে এই নির্বাচনটি উৎসবমুখর হয়নি।
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় চায়ের দোকানদার তোতা মিয়া। তার চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে নির্বাচনে বিষয়ে কথা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আপনি কি ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে গেলেও যা, না গেলেও তা। খামাখা কেন যামু? ভোট আসে যায়, আমগো কী?’
একই এলাকার লেপ তুষকের ব্যবসা করেন মো: মতিউর রহমান। ভোট দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাকে ভোট দিবো, এই নির্বাচনে তো কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন তারা সবাই একই দলের। এই ভোট দেওয়া না দেওয়া একই বিষয়। ভোট দেয়া আপনার অধিকার, আপনি কেন ভোট দিচ্ছেন না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়া যেমন অধিকার, ভোট না দেওয়াও আমার নাগরিক অধিকার।’
গাজীপুরা এলাকার ভোটার আব্দুল হামিদ। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো ভাই আপনি ভোট দিয়েছেন কি না তিনি বললেন, ‘আমার পছন্দের কোনো প্রার্থী নাই। তাছাড়া আমি যাকে ভোট দিব তিনি যদি ভালো কাজ করেন তাহলে আমার ভালো লাগবে, আবার তিনি যদি খারাপ কাজ করলে সেই দায়ও আমাকে নিতে হবে। তিনি নিজেকে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে ‘না ভোট’ থাকলে তিনি এটাই বেছে নিতেন।
টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করেন ইমতিয়াজ। তিনি এই এলাকার ভোটার। ভোট দিতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে যাই নাই, কারণ ২০১৪ সালেও ভোট দিতে পারি নাই, ১৮ সালেও পারি নাই। ২০২৪ সালেও ভোট দেয়ার আগ্রহ নেই। কষ্ট কইরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কি লাভ।’
বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা কী জানতে চাইলে ইমতিয়াজ বলেন, ‘ভোট দিতে গিয়ে শুনি ভোট হয়ে গেছে, ২০১৮ সালেও একই কথা ছিল।’
একই এলাকার গৃহীনি সালমা বেগমের সাথে কথা হয়। ভোট দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না ভোট দিতে যাইনি। কেন যাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের কোন বিরোধীদল নাই, যারা নির্বাচন করছেন তারা নিজেরা নিজেরাই। আমি ভোট দিলেও তারা পাশ করবে, না দিলেও পাশ করবে। কষ্ট করে কেন্দ্রে গিয়ে কি লাভ। তাই আমি মনে করছি ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নাই, ইচ্ছা হয়নি।’
টঙ্গীবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মিন্টু হোসেন। তিনি ভোট দিয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আগের মতো ভালো না লাগলেও ভোট দিতে গেছি। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই ভোটার। আমার ছেলেটা কখনো ভোট কীভাবে হয় তা দেখেনি, তারে দেখাইতে নিয়ে গেলাম। আগে আমরা ভোটের যে চিত্র দেখেছিলাম, ছেলেকে তো সেরকম দৃশ্য দেখাইতে পারি নাই।’ কেন পারেন নাই এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম ভোটার হয়েছিলাম, তখন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখতাম অনেক বড় লম্বা লাইন। সেই লম্বা লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিয়েছি। এখন ভোট দিতে এসে দেখি ভোট কেন্দ্রে কোন ভোটার নাই, অনেক কম।
টঙ্গীর মধুমিতা এলাকার মো: মনু মিয়া গলায় নৌকার ব্যাজ পড়ে ঘুরছেন। জিজ্ঞাসা করলাম চাচা আপনি কি ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছি। ভোটের পরিস্থিতি কেমন দেখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের মতো প্রতিযোগিতা থাকলে ভাল্লাগতো।’
এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘এই নির্বাচন আংশিক ত্রুটিপূর্ণ।’ তিনি বলেন, সরকারবিরোধী ভূমিকায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেয়া এবং ইনক্লুশান শতভাগ নিশ্চিত করতে না পারা। দল-মত নির্বিশেষে ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি না হওয়া। তবে এই নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাদারিত্বের ভূমিকা ছিল ভালো। এছাড়াও বিএনপিসহ যারা নির্বাচন বর্জন করেছে তারাও নির্বাচনের দিন প্রতিহত করার চেষ্টা করেনি।