May 3, 2024, 12:29 am

গাজীপুরে গ্যাস সংকট: উৎপাদন ব্যাহত

Reporter Name
  • আপডেট Sunday, January 21, 2024
  • 31 জন দেখেছে

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: গাজীপুরে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পাঞ্চল এলাকার কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের কারণে শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোন সময় ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আশংকা করছেন তারা।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, বাসন ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। শ্রমিকরা কারখানায় আসছেন ঠিকই কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে কাজ করতে পারছেন না। ৮ ঘন্টার কাজ ১৬ ঘন্টা করেও শেষ করতে পারছেন না বলেও তাদের দাবি। প্রতিদিন তাদের গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা লোকসান।
গাজীপুরের কোনাবাড়ি আমবাগ সড়কে অবস্থিত এম এম নিটওয়্যার কারখানার এজিএম এডমিন মনোয়ার হোসেন বলেন, কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তাদের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আগে দিনে গ্যাসের চাপ কম থাকলেও রাতে গ্যাসের চাপ ভালোই পাওয়া যেত। কিন্ত কিছুদিন ধরে রাতে বা দিনে গ্যাসের চাপের একই অবস্থা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের কারখানার উৎপাদনের চালিকা শক্তির মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎই প্রধান। এরমধ্যে বর্তমানে গ্যাসের সংকটের কারণে আমাদের কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, কারখানায় প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টন উপাদন ক্ষমতা থাকলেও এখন গ্যাসের সংকটের কারনে ২০ থেকে ২৫ টনে নেমে এসেছে। তাই সরকার যদি এলএনজি আমদানি যথাযথ সময়ে করে দিতে পারেন তাহলেও পোশাক কারখানাসহ গ্যাস নির্ভর সকল কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে। এ সংকটের কারণে কিছুদিন ধরে আমরা কারখানায় অর্ধেক মেশিন চালু রাখতে পারছি, বাকি মেশিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদনও কম হচ্ছে অপরদিকে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চল (বিসিক) এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা বলেন, মাস ঘুরতেই শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হয় নতুবা তারা আন্দোলনে নামেন বেতন ভাতার দাবিতে। অথচ গ্যাস সংকটে কারখানায় গত চার দিন বন্ধ থাকার পর বিকল্প হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত খরচে সিএসজি ও ডিজেলের মাধ্যমে ব্রয়লার এবং জেনারেটর চালু করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, এর আগে মাস খানেক ধরেই গ্যাস সংকটে কারখানা চলেছে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বানিয়ার চালা এলাকার মোশাররফ টেক্সটাইল কারখানার এজিএম আব্দুস সালাম বলেন, কারখানায় গ্যাসের সংকটের কারনে আমাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে। ফলে আমাদের কারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম নির্বাচনের পর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না গ্যাসের সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদেও কারখানাও গ্যাসের একই চিত্র পাওয়া যায়।
মহানগরের সালনা এলাকায় অবস্থিত প্রীতি গ্রুপ’র জিএম একেএম ফজলুল হক বলেন, তাদের কারখানায়ও গ্যাসের সংকট রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা মতো মাল সরবরাহ করতে পারছি না। এতে ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরো বলছেন খুব দ্রুত গ্যাস সংকট সমাধান করা না হলে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানার বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে। শুধু শিল্পকারখানায় নয়, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক লাইনেও গ্যাসের চাপ কম বলে জানা গেছে।
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা শাহানা সুলতানা বলেন, রান্নার জন্য এখন সিলিন্ডার গ্যাসই ভরসা। একদিকে তিতাসের লাইনের গ্যাস ব্যবহার না করেই ব্যাংকের নির্ধারিত হারে বিল গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে সিলিন্ডার গ্যাস নগদ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে জ¦ালানী খরচও দি¦গুন গুনতে হচ্ছে। যে এলাকায় চুলায় তিতাসের গ্যাস ব্যবহার করা সম্ভব হবে না ওই এলাকার গ্যাস বিল তিতাস গ্যাস বিপনন ও সরবরাহ, গাজীপুর শাখার ম্যানেজার অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার মো. রিদওয়ানুজ্জামান বলেন, গাজীপুরে দুই হাজারের মতো শিল্প কারখানায় তিতাসের সংযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (খঘএ) সরবরাহ কম থাকার কারণে ভোক্তাদের ব্যবহারের জন্য গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দৈনিক ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু গ্রীড থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো (লোকাল ও রপ্তানীমূখী) দুইটি ক্ষেত্রেই খুব ইফেক্ট হচ্ছে। আমাদেও যে কোন প্রজেক্ট করার আগে আমাদেও জ¦ালানী নিশ্চিয়তাটা দরকার আগে। কারণ ইন্ডাস্ট্রি না হলে এমপ্লমেন্ট হবে না এবং ইন্ডাস্ট্রিগুলো নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হবে না। তাই আমাদের এখন দরকার হলো জ¦ালানী নিরাপত্তা, জ¦ালানী নিরাপত্তা না হলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলবে না। এতে মেশিনপত্রগুলো ন্ষ্ট হয়ে যাবে। এখন প্রডাক্টিভিটি কমলে ইন্ডাস্ট্রি সাসটেইন করতে পারবে না। তখন ইমপ্লয়মেন্ট হবে না, ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। এতে দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। এজন্য তিনি অন্যান্য যেকোন ডেভেলপমেন্ট থেকে জ¦ালানী খাতকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর