May 5, 2024, 12:14 pm

গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মাঘ মেলা আজ শুরু

Reporter Name
  • আপডেট Monday, January 15, 2024
  • 47 জন দেখেছে

মো: মুর্শিকুল আলম, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর :: বিদায় নিয়েছে পৌষ মাস। আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাঘ মাস। এই দিনের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন কালীগঞ্জবাসী। উপজেলার শীতলক্ষ্যার উত্তর তীরের বকুলতলায় সাজ সাজ রব। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকে দেড় শ বছরের পুরোনো গ্রামীণ মাঘ মেলায়। এই মেলায় বাহারি সব খাবার আর তৈজসপত্রের দারুণ সমারোহ। সব মিশেলে উৎসবে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা। শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি সব বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলায় যেন পরিণত হয় এই মাঘ মেলা। শুরুতে এই মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় দেড় শ’ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এ মেলায় বিভিন্ন রকমের পণ্য পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন পুরো এক মাসের জন্য। এ সময় উপজেলার দড়িসোম এলাকার শীতলক্ষ্যা তীরের বকুলতলা শতভাগ বাঙালিয়ানায় নিজেকে সাজায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষের পদচারণে মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। মৃৎশিল্পের পাশাপাশি বস্ত্রশিল্পেরও দেখা মিলে এই মেলায়। মাটির তৈরি ফলের রঙিন ব্যাংক, সাহেব-মেম কিংবা বউ পুতুল, মাটির গরু, ছাগল, হাতি, বাঘ, সিংহ, ঘোড়াসহ নানা তৈজসপত্র উঠেছে এ মেলায়।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্টলে ভাগ করে শিশুদের জন্য টমটম গাড়ি, বেলুন, আধুনিক খেলনার সমাহারও দেখতে পাওয়া যায়। চরকি, টয় ট্রেন, মুভিং নৌকায় ওঠার জন্য শিশুরা বড়দের কাছে বায়না ধরে। সঙ্গে তিলের খাজা, কদমা, নিমকি, মুড়কি, টক-মিষ্টি আচার এবং বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন কিনে বাড়িতে ফিরে যেতে দেখা যায় মেলায় আসা দর্শনার্থীদের।
জানা যায়, মাঘ মেলা শুরু হয়েছে মাসব্যাপী। পুতুল নাচ, নাগরদোলা, ঘূর্ণি বিদেশ, বেলুন-বন্দুক নিশানায় মেতে ওঠে নানা বয়সী শিশু-কিশোরের দল। মেলা হবে আর চটপটি-ফুচকা হবে না, তাই কি হয়? আলু-ডাবলির সঙ্গে তেঁতুলের পানি মেশানো ঝাল-টক চটপটি নস্টালজিক বয়স্কদের জিভেও পানি আসে। তাই মেলায় চটপটি-ফুচকা ছাড়া কল্পনাও করা যায় না।
মেলায় ঘুরতে আসা মো. মুক্তার হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলায় আমার বাবার হাত ধরে এই মেলায় আসতাম। মেলায় বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন আর খেলনা কিনার বায়না ধরতাম। আমি এখন আমার ছেলেকে নিয়ে আসি। ভালো লাগে যখন সে আমার কাছে বায়না ধরে ওই সব জিনিস কিনে দেওয়ার। মনে পড়ে ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা।

অপর দর্শনার্থী মো. মোজাফ্ফর হোসেন জানান, কাঠের আসবাব কিনতে মেলায় এসেছেন। সাধারণত ফার্নিচারের দোকান থেকে কিনতে বেশি টাকা গুনতে হয়। মেলায় সাধারণত বাইরের থেকে কমে জিনিস কেনা যায় বলে তিনি এখানে এসেছেন।
কথা হয় মেলায় আসা ছাত্র ইয়াকিন হোসাইন রায়ানের সাথে। সে জানায়, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। তার মায়ের সঙ্গে মেলায় এসেছে। আজকে সে খেলনা কিনে বাড়িতে ফিরবে।
মেলায় আসা ব্যবসায়ী মো. ফয়জুর এসেছেন কুমিল্লা থেকে। তিনি সারা দেশে যেখানে মেলা হয় সেখানেই ছুটে বেড়ান। নানা রকমের আসবাব তিনি বিক্রি করেন। এখানে এসেছেন এক মাসের জন্য। গত বছর মোটামুটি বেচাকেনা ভালোই ছিল। তিনি আশা করছেন এ বছরও ভালোই বেচাকেনা হবে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা অপর ব্যবসায়ী মো. রোমান হোসেন বলেন, তিলা কদমার ব্যবসা আমার পৈতৃক পুরুষের ব্যবসা। বংশপরম্পরায় এ কাজ এখন আমি নিজের হাতেই করছি। যেখানেই মেলার আয়োজন হয়, সেখানেই ছুটে যাই। মাঘ মেলায় আগামী এক মাস কালীগঞ্জেই অবস্থান করব এরপর অন্যত্র চলে যাব।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ব্যবসা করি। আমার বাপ-দাদাদের দেখতাম মেলাতে এসে দোকানদারি করতে। আগের মতো সেই আমেজ এখন আর দেখি না। সবকিছুতেই কৃত্রিমতা লক্ষ করি। আসলে গ্রামীণ সেই পরিবেশের পাশাপাশি সহজ-সরল সেই মানুষও এখন আর নেই। তবুও এটুকুতে স্বস্তি পাই, এই মাঘ মেলা এখনো বেঁচে আছে।
মেলার আয়োজক ওয়াহিদুল ইসলাম সুমন জানান, স্থানীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, মেলায় স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন জানান, সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে, আইনের পরিপন্থী জুয়া বা অসামাজিক কার্যকলাপ ঠেকাতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মেলায় সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর