May 2, 2024, 7:59 am

অটোভ্যান গাড়ী ছিনতাই করে চালককে হত্যা, ৩জন গ্রেফতার

Reporter Name
  • আপডেট Friday, April 19, 2024
  • 12 জন দেখেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর :: প্রতিদিন ২০০ টাকার ভাড়ায়চালিত উপার্জনের অটোভ্যান দিয়ে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে চলত অভাবের সংসার। সেই একমাত্র ভাড়ার অটোভ্যান রক্ষা করতে গিয়ে ছিনতাইকারীর হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন হতদরিদ্র ভ্যানচালক। হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর জড়িত তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। গত বুধবার রাতে চরভদ্রাসন উপজেলার রমেশ বালার ডাঙ্গী গ্রামে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাইদুল শেখকে (১৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যানুসারে ঘটনার সঙ্গে জড়িত একই এলাকার আসামি লিটন মণ্ডল ওরফে রুবেল (২৪) ও রুমান মণ্ডলকে (১৭) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি সাইদুল শেখের বাড়ি থেকে মোবাইল ও রোমানের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি লোহার পাতের চাকু উদ্ধার করা হয়।
এম মোর্শেদ আলম জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গজারিয়া বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে সাইনবোর্ড যাওয়ার কথা বলে ১৫০ টাকা ভাড়া ঠিক করে হারুন অর রশিদের ভ্যানে ওঠে সাইদুল, লিটন ও রুমান। এরপর সাইনবোর্ড এলাকার পদ্মা নদীসংলগ্ন একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ভ্যানচালক হারুনকে ধারালো চাকু দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে আসামিরা। তখন হারুন ভ্যানের জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। তখন আসামিরা বলে, ‘বেঁচে থাকলে ভ্যান কিনতে পারবেন, এখান থেকে চলে যান।’
তিনি আরও জানান, আবারও তিনি ভ্যানের মায়ায় আসামিদের অনুনয়-বিনয় করে। এ সময় আসামি রুবেলের হাতে থাকা চাকু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আসামিরা তার মাথায় বারংবার আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামিরা ভ্যান নিয়ে চলে যায়। পরে ছিনতাই করা ভ্যান মাত্র ১০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, আসামি রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এর আগে তিনি ঢাকার সাভার এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাই করে। এ সময় ওই রিকশাচালককে নির্মমভাবে মারধর করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে রিকশা নিয়ে চলে যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে ওই রিকশা চালক বেঁচে যান। এ ঘটনায় সাভার থানায় একটি ছিনতাই মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং গত জানুয়ারিতে ওই মামলায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর আবারও ছিনতাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জেলার সদর উপজেলার আলিয়াবাদের চর গজারিয়ার পদ্মা নদী সংলগ্ন মেহগনি বাগানের অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করে। পরে রহিমন বেগম শনাক্ত করেন যে লাশটি তার স্বামী হারুন অর রশিদের।
এ ঘটনায় ভ্যানচালক হারুন অর রশিদের স্ত্রী রহিমন বেগম অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি ছিনতাইসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত হারুন অর রশিদ (৩৫) নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দুলারডাঙ্গী গ্রামে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। স্ত্রী রহিমন বেগম ও আট বছর বয়সী নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে বসবাস করতেন।
রহিমন বেগম জানান, ঘটনার দিন বিকেলে বাড়ি থেকে ভ্যান নিয়ে বের হন তার স্বামী। সন্ধ্যার মধ্যেই স্বামী প্রতিদিন ফিরে আসেন। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেননি। রাত ১০ টা থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন সকালে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন সাইনবোর্ড এলাকায় মেহগনি বাগানের মধ্যে একটি লাশ পড়ে আছে। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করি। নিজেদের কোনো ভ্যান ছিল না। আমার স্বামী ভ্যান ভাড়া নিয়ে চালাতেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। আমার সব শেষ হয়েছে। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলব কীভাবে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার দাবি করছি।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর