December 7, 2023, 12:00 am

গাজীপুরে নির্বাচনি লড়াই জমজমাট, কে পাচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন

Reporter Name
  • আপডেট Thursday, April 13, 2023
  • 150 জন দেখেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর :: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২৫ মে। ভোটারদের দৃষ্টিতে অনেকটা তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করলে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। ভোর থেকে গভীর রাত পযন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণার মধ্য দিয়ে জানান দিচ্ছেন। এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও একেক প্রার্থী একেক স্টাইলে নিজের যোগ্যতার জানান দিচ্ছেন। পাস করলে কীভাবে নগরী সাজাবেন সেই স্বপ্নও দেখাচ্ছেন ভোটারদের। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এই সমীকরণ ধরেই নির্বাচনি নকশা আকছেন মেয়র প্রার্থীরা। কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, তা নিয়ে এই মুহূর্তে চলছে মূল হিসাব নিকাশ।

২৫ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপির কোনো মেয়রপ্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। নৌকার মনোনয়ন যে পাবেন তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন সেটি মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আবার ভুল প্রার্থী বাছাই হলে ক্ষমতাসীন দলকে মূল্য দিতে হতে পারে—এমন আলোচনাও আছে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাসহ আওয়ামী লীগের এক ডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তাদের সমর্থনে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা নগরে ব্যানার, ফেস্টুন, রঙিন পোস্টার সাঁটিয়েছেন।

মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস, মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেলসহ আওয়ামী লীগের অর্ধডজন নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তারা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ ও লবিং করছেন। 

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক সচিব নিয়াজউদ্দিন নির্বাচন করবেন। এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের নাম ঘোষণা করেছে। তবে নগরবাসীর মূল ফোকাস আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে। নৌকার মাঝি কে হচ্ছেন-বাজারঘাট, পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকানে আড্ডায় তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের জল্পনাকল্পনার যেন শেষ নেই? তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে আছেন গাজীপুর সিটির সাময়িক বরখাস্ত মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম।

এ অনুষ্ঠানে তিনি জানান, কতিপয় লোকের মিথ্যা অপপ্রচারে তাকে খেসারত দিতে হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে তিনি দলে ফিরেছেন। নির্বাচন করতে তার কোনো বাধা নেই বলেও সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্টির সহায়তায় তিন বছর রাতদিন পরিশ্রম করে নগরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দেড় বছর ধরে দায়িত্বের বাইরে থাকলেও প্রতিমুহূর্তে আমি জনগণের পাশে থেকেছি। নগরবাসী আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন, তারা আমার সঙ্গে আছেন। দলীয় মনোনয়ন নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। 

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, জনমত বিবেচনায় নিয়ে আমার বাইরে কাউকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ভাবার অবকাশ নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছি সেটি আমার নির্বাচনি পুঁজি। আমাকে বরখাস্ত করার পর গত দেড় বছর সিটি কর্পোরেশনে কী হয়েছে নগরবাসী দেখেছে। দল আমার কাজের মূল্যায়ন করবে সেই সঙ্গে নগরবাসী আমাকে আবার মেয়র নির্বাচিত করবেন এই বিশ্বাস আমার আছে। 

নগরের ১৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মালেক মিয়া জানান, রাজধানী লাগোয়া এ শিল্পনগরীতে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় বেড়েছে। পবিত্র রমজান হওয়ায় প্রতিদিন ইফতার ও দোয়া মাহফিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থিতার বিষয়ে জানান দিচ্ছেন অনেকে। নগরের বাসন এলাকার ভোটার শরিফুল ইসলাম শরীফ যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনে একজন সৎ, দক্ষ ও জনদরদি ব্যক্তি নগরীর দায়িত্ব নিক।

জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী একাধিক কাউন্সিলর বলেছেন তার ‘নিজস্ব ভোট ব্যাংক’ থাকার কথা। এর প্রমাণ হিসাবে তারা দেখাচ্ছেন তাকে মেয়র পদে ফেরাতে সিটি করপোরেশনের ৬১ জন কাউন্সিলরের আবেদন। মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সেই ‘ভোট ব্যাংক’ কাজে লাগাতে পারবেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে সরকারি দলের প্রার্থী হিসাবে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বরখাস্ত হয়ে তিনি দেড় বছর ধরে দায়িত্বের বাইরে। ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তিনি সব সময় মানুষের কাছে আছেন। 

এদিকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী সাড়ে চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে থাকা আজমত উল্লাহ খান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দল আমাকে মেয়র পদে নমিনেশন দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করতেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করি। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। এর আগে দলের জাহাঙ্গীরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, দল যাকে নমিনেশন দেবে, তাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা সবার থাকতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার বিধানটি কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ লক্ষ্য করা গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও আজমত উল্লাকে একসঙ্গে দেখা যেত। কিন্তু এবার মেয়র পদে প্রতিমন্ত্রীর চাচা মতিউর রহমান মতি মনোনয়ন ফরম তোলার পর অনেকে নানা কথা বলছেন। মতিউর রহমানের মনোনয়ন প্রত্যাশার ব্যাপারে জানতে চাইলে আজমত উল্লাহ খান বলেন, যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতে পারে। উনাকে দৃশ্যত কোনো প্রচারে দেখা যায়নি। আর জাহিদ আহসান রাসেল তো আমার জন্য কাজ করছেন।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রায় তিন দশক ধরে টঙ্গী ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুবারে ৪৪ মাসের মতো ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনিও এবার মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগ যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করেছি। তাই আমাকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিলে আমি আরও ভালোভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারব। আমি সব সময় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলেছি। ভবিষ্যতেও মেনে চলব।

এসব বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, যে কেউ দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন। কেন্দ্র সবার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। সব বিষয় বিবেচনা করেই কেন্দ্র প্রার্থী দেবে। কেন্দ্র যাকে দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।

উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালের ৭ জুলাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান।

অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামেন। নানা নাটকীয়তায় তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) ব্যাপক আলোচনায় আসেন এবং কেন্দ্রের নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু আজমত উল্লা খান বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে পরাজিত হন। 

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সম্পর্কিত আরও খবর